সংখ্যালঘু পরিবারের উপর হামলা: ২৪ দিনেও মেলেনি প্রতিকা
নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় প্রতিপক্ষের হামলা ও মারধরের ঘটনায় জাতীয় পরিষেবা ৯৯৯-এ ফোন করেও প্রতিরক্ষার পায়নি সংখ্যালঘু পরিবার। গত ১ এপ্রিল সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভালুকা চাঁদপুরের সুভাষ চন্দ্র মণ্ডলের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। তিনি ওই এলাকার মৃত দৈব চরণ মণ্ডলের ছেলে।
অভিযোগ উঠেছে, অভিযোগ আমলে নিলেও এঘটনার ২৪ দিনেও মামলা রেকর্ড করেনি সদর থানা পুলিশ৷ বরং ঘটনার একদিন পর প্রতিপক্ষের দায়েরকৃত মামলা রেকর্ড করে পুলিশ। আর পুলিশের এমন দ্বৈতনীতির ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করে ভরসা উঠে যাচ্ছে বলে দাবি ভুক্তভোগী পরিবারের।
জানা যায়, গত ৩১ মার্চ সকালে সুভাষ মণ্ডলদের ৫০ বছর ধরে ভোগদখলে থাকা পৈত্রিক জমিসহ খাস জমির বাঁশ বিক্রি এবং মাটি কাটতে থাকেন একই এলাকার শওকাত আলীর ছেলে আবুল কালাম, সালাম ও পাশ্ববর্তী এলাকার সাইদুল ইসলাম। এসময় সুভাষ ও তার ভাই প্রভাষ তাদের বাঁধা দিতে গেলে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হন তারা৷ উপায়ন্তর না পেয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে জাতীয় পরিষেবা ৯৯৯-এ কল করে অভিযোগ জানান জানান সুভাষ। আর ওইদিন সকাল ৭:৩০ মিনিটে ৯৯৯ থেকে পাঠানো এক ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে তার অভিযোগটি (অভিযোগ নাম্বার: CFS49245429) আমলে নেওয়া হয় বলে জানানো হয় । এবং ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ার পরে তাৎক্ষণিক ভাবে ব্রহ্মরাজপুর ফাঁড়ির এসআই হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সরকারি খাস জমির বাঁশ বিক্রির অর্থ জব্দ করেন এবং মাটি কাটা বন্ধ করে দেন। আর এঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ১ এপ্রিল সকালে সুভাষ মণ্ডলদের বসতবাড়ি এসে হামলা চালান কালাম, সালাম ও সাইদুল। তাদের হামলায় সুভাষসহ আহত হন তার ভাই প্রভাষ, ১৩ বয়সী শিশু সন্তান জয় কুমার, মেয়ে সুপ্রিয়া মণ্ডল ও সুভাষের স্ত্রী রিনা মণ্ডল ও প্রভাষের স্ত্রী অসীমা মণ্ডল। আর ওই ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জাতীয় পরিষেবা ৯৯৯-এ ফোন করেন সুভাষ। আর ওইদিন সকাল ১০:০৪ মিনিটে ৯৯৯ এক ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে সাতক্ষীরা সদর থানার ডিউটি অফিসারের নাম্বার পাঠান সুভাষকে। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আর এঘটনায় সুভাষের দায়েরকৃত একটি অভিযোগ আমলে নেয় পুলিশ। তবে সুভাষের অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড না করে ঘটনার পরের দিন সাইদুল দায়েরকৃত অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে পুলিশ।
এব্যাপারে সুভাষ ও তার ভাই প্রভাষ বলেন, ১ এপ্রিল তাদের হামলায় আমরাসহ আমাদের পরিবারের ৬ সদস্য আহত হয়। এর ভিতরে পরিবারের ৩ সদস্য স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা নিলেও আমরা (প্রভাষ-সুভাষ) ও ১৩ বছর বয়সী জয় কুমার সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। পরে যখন অভিযোগ দায়ের করি তার সাথে মেডিকেল সার্টিফিকেট অন্তভূক্ত করি। তবে সবকিছুর প্রমাণ থাকলেও পুলিশ আমাদের অভিযোগ আমলে নিয়েও সেটা মামলা হিসেবে রেকর্ড করিনি। বরং স্থানীয় ভাবে মিমাংসার কথা বলে উল্টো প্রতিপক্ষের সাজানো মামলা আমাদের বিরুদ্ধে রেকর্ড করেছে সদর থানা পুলিশ বলে দাবি করেন তারা।
আর এঘটনার পর থেকে পরিবারের সবাই নিরাপত্তাহীনতার ভিতরে রয়েছেন জানিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
এব্যাপারে এসআই হাসান জানান, ৩০ মার্চ ৯৯৯-এ ফোন করে সুভাষ। তার ফোন পেয়ে উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। এবং সরকারি খাস জমির বাঁশ বিক্রিত করার অপরাধে বিক্রিত বাঁশের অর্থ জব্দ করি। পরে ১ এপ্রিল কী ঘটেছে সেটা জানেননা বলে জানান তিনি।
এব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিজান চৌধুরী এবং ইউপি সদস্য মিঠু জানান, ঘটনার যেদিন সূত্রপাত হয় সেদিন ৯৯৯-এ ফোন করার সুবাদে বিক্রিত বাঁশের অর্থ জব্দপূর্বক মাটি কাটা বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। আর এঘটনার পরের দিন সুভাষদের বাড়ি এলাকায় উভয়পক্ষের ভিতরে সংঘর্ষ ঘটে। এতে কমবেশি সবাই আহত হন।
এব্যাপারে সদর থানার তদন্ত ওসি নজরুল ইসলাম জানান, ঘটনার বিষয়ে সেভাবে জানেননা তিনি। এটা ওসি স্যার ভালো বলতে পারবেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রভাষ-সুভাষদের দেখা করার জন্য বলেন তিনি। তারা দেখা করলে বিস্তারিত জেনে সেটা জানাতে পারবেন বলে জানান।
এব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিদুল ইসলামের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি কল রিসিভ না করাতে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
Leave a Reply